সিটি নির্বাচনে বিএনপির সব নেতা সমানভাবে কাজ করেননি বলে অভিযোগ তুললেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দলের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন।
রোববার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর মতো শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের উপস্থিতিতে এক মতবিনিময় এই অভিযোগ করেন তিনি।
ইশরাক বলেন, “কেউ ঝুঁকি নেবে, কেউ ঘুমিয়ে থাকবে, সেটা হতে পারে না। এভাবে আমাদের সাফল্য আসতে পারে না।”
গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি নির্বাচন পরবর্তী নিজেদের কাজের মূল্যায়নে দক্ষিণে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে নয়া পল্টনে আনন্দ ভবন কমিউনিটি সেন্টারে এই মতবিনিময় সভা হয়।
ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরাসহ স্থানীয় নেতারা প্রথমে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরে ১০ মিনিট ধরে প্রকাশ্য সভায় বক্তব্য রাখেন জ্যেষ্ঠ নেতারা।
দক্ষিণে বিএনপি প্রার্থী করেছিল ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে রাজনীতিতে নবিশ ইশরাককে। উত্তরে প্রার্থী ছিলেন তাবিথ আউয়াল।
দুই সিটিতে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থীরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের চেয়ে প্রায় দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে হারলেও বিএনপি অভিযোগ করেছে, কারচুপির মাধ্যমে তাদের হারানো হয়েছে।
তবে মতবিনিময় সভায় দলের দুর্বলতার দিকও তুলে ধরেন ইশরাক।
তিনি বলেন, “নির্বাচনের দিন সকাল বেলা ভোট দিয়ে আমি নিজেও কেন্দ্র থেকে কেন্দ্র ঘুরে বেড়িয়েছি। আমি আকাশ-পাতাল তফাত লক্ষ্য করেছি। কিছু কিছু এলাকায় আমি দেখেছি, সেখানকার কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজের জান-জীবন ঝুঁকি রেখে চেষ্টা করেছে নির্বাচনের বিজয়কে ছিনিয়ে আনার জন্য।
“আবার কিছু কিছু জায়গায় আমি গিয়ে দেখেছি, সেখানে কাউন্সিলর প্রার্থীও নাই, আমাদের স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মী যারা চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাদেরকে সংগঠিতই করা হয় নাই।”
নির্বাচনের দিন কার কী ভূমিকা ছিল, নাম উল্লেখ না করে স্থানীয় নেতাদের তা জানাতে আহ্বান জানান ইশরাক।
তিনি বলেন, “নির্বাচনে আমাদের মধ্যে যে দুর্বলতাগুলো ছিল, সেগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে, যাতে সামনের দিনগুলোতে আমরা আমাদের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধান করতে পারি।
“নির্বাচনের দিন কার কী ভূমিকা ছিল, সেটা আপনারা কারও নাম উল্লেখ না করে বলুন।”
সরকার ও ইসির প্রতি আস্থাহীনতা নিয়েও এই ভোটে অংশ নেওয়ার কারণ হিসেবে বিএনপি বলেছিল, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের অংশ হিসেবে ভোটে অংশ নিচ্ছে তারা।
ইশরাক বলেন, “আমরা যদি সুসংগঠিত হয়ে সামনের দিনগুলোতে আন্দোলনকে বেগবান না করতে পারি, তাহলে কিন্তু আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রীর মুক্তিও খুব শিগগিরই সম্ভব হবে না, দেশে গণতন্ত্রও ফেরত আসবে না।”
দক্ষিণে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “নির্বাচনে ৭-৮ % এর বেশি মানুষ ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয় নাই। তারপরেও দক্ষিণে ২৯% এবং উত্তরে ২৫% ভোট কাস্টিং দেখানো হয়েছে ইভিএমে কারচুপির মাধ্যমে। এই মেশিন যে গ্রহণযোগ্য নয়, ত্রুটিপূর্ণ, এটা প্রমাণিত হয়েছে এই নির্বাচনে।
“এই নির্বাচনে আমাদের সফলতা হচ্ছে গণতন্ত্র যে দেশে নাই, সেটা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভোটের প্রতি জনগণের এই অনীহা সরকারের প্রতিই অনাস্থা।”
তিনি বলেন, “আজকে কাউন্সিলর প্রার্থীরা এখানে শপথ গ্রহণ করেছেন ওয়ার্ড-থানাসহ সকল পর্যায়ে দলকে সুসংগঠিত করে, আরও শক্তিশালী করে আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করবে। আমরা আশা করি, ঢাকা মহানগরী সারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে আজকে প্রস্তুত।”
দক্ষিণে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মির্জা আব্বাস বলেন, “বলা হচ্ছে, যেখানে আওয়ামী লীগ লাঠি-সোঁটা, র্যাব-পুলিশ নিয়ে হানা দিয়েছে, সেখানে আমাদের কমিশনার প্রার্থীরা টিকতে পারে নাই। আমার একটাই প্রশ্ন, আমাদের সংগঠনটা কি এতই উইক যে আমরা কিছুই করতে পারলাম না।
“আমি বলি, আমাদের কিছু একটা করা উচিৎ ছিল। এমন একটা সংবাদ পেলাম না যে, ওখানে কিছু একটা হয়ে গেছে। হয় নাই। সুতরাং আমাদের সংগঠনটাকে আমাদের জন্য, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য সুন্দর ও সুসংগঠিত করতে হবে।”
এই নির্বাচনে বিএনপি যে গুটিকয়েক কাউন্সিলর প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন, তার মধ্যে ঢাকার সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাসের ভাইও রয়েছেন।
মির্জা আব্বাস দাবি করেন, বিএনপির আরও কাউন্সিলর প্রার্থী ভোটে জিতলেও তাদের কারচুপি করে হারানো হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমাদের মেয়র ইশরাক জনগণের মেয়র, আমাদের মনোনীত কমিশনার প্রার্থী যারা ছিলেন, সকলেই জনগণের কাউন্সিলর।
“আপনাদের মনে রাখতে হবে, এই সমস্ত (নির্বাচিত ঘোষিত) মেয়র, কাউন্সিলররা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, তাদের সকলকেই একইভাবে আমাদের সমীহ করার প্রয়োজন নাই।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আবদুস সালাম, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, আফরোজা আব্বাস, শিরিন সুলতানা, শহিদুল ইসলাম বাবুল, সুরুজ মিয়া, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, নবী উল্লাহ নবী রফিক শিকদার এই সভায় উপস্থিত ছিলেন।