মিডিয়া কাভারেজঢাকায় নিম্ন আয়ের লোকজনের আবাসন সমস্যা সমাধানে করণীয়

December 30, 2019by farjul0

ঢাকা শহরের দুই সিটি কর্পোরেশনে লাখ লাখ মানুষ বস্তিতে বসবাস করছেন। রাজধানীতে বসবাসরত এই বিপুলসংখ্যক দরিদ্র মানুষের বাসস্থানের অধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে সংবিধানে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সরকারের এ বিষয়ক কোনো নীতিমালা কিংবা পরিকল্পনার কোনো উল্লেখযোগ্য বাস্তবায়ন এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়।

নানা কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে যেমন-
১. দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসন সমস্যা সমাধানের প্রধান দায়িত্ব নিয়ে থাকে সরকার। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে। তাই রাজধানীসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে বস্তি ও বস্তিবাসীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

২. রাজধানীর ভাষানটেকে দরিদ্র মানুষের একটি আবাসন প্রকল্পের কথা বলা হলেও সেই প্রকল্প আর দরিদ্রদের থাকে নি, সেখানে ঢুকে পড়েছে রিয়েল এস্টেট কোম্পানি।

৩. প্রতাপশালীদের মদদে সরকারি জায়গায় বস্তি গড়ে উঠেছে। তারা সেখান থেকে নানা সুবিধা পায়।

৪. পাঁচ হাজার বস্তিবাসী দরিদ্র জনগোষ্ঠী হওয়ার কারণে অবহেলা-বঞ্চনার শিকার। ঢাকা নগরীর উন্নয়নের বিশদ পরিকল্পনাতেও উপেক্ষিত থেকেছে বস্তিবাসীর আবাসনের বিষয়টি।

৪. ধনীকে আরো ধনী করার ব্যবস্থা করা হয়েছে, গরিবের সমস্যা সমাধানে নেই ব্যবস্থা।

৫. রাজউকের দুর্নীতি ও অব্যবস্থা ভয়াবহ। যখন রক্ষক ভক্ষক হয় তখন ঢাকার দরিদ্র মানুষের আবাসন সমস্যার সমাধান কী করে সম্ভব?

৬. দরিদ্র মানুষের আবাসন প্রকল্পের জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয় না।

৭. বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ ও বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হলেও তা হয় নি।

সমাধান:
১. ঢাকার প্রায় ৪০ লাখ বস্তিবাসীকে পুনর্বাসন তথা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বাসস্থানের অধিকার নিশ্চিত করতে ইনক্লুসিভ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি। এতে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ভারসাম্যপূর্ণ হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

২. বস্তিবাসীদের বাসস্থানের জন্য ভূমি বরাদ্দ প্রক্রিয়া সহজ করা এবং সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।

৩. আবাসন সংকট সমাধানে বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এজন্য তাদেরকেও এগিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।

৪. দরিদ্রদের আবাসনের অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করা প্রয়োজন। এর অংশ হিসেবে যেসব প্রকল্পের ব্যর্থতা দেখা দিয়েছে তা তদন্ত করে সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

৫. টেকসই সমাধানের জন্য গবেষণার পাশাপাশি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হবে।

৬. বস্তি উন্নয়নের চেয়ে স্বল্প আয়ের লোকজনের আবাসন সংকট সমাধানের দিকেই নজর দেয়া হবে বেশি। যাতে সবাই মানসম্মত আবাসনের সুবিধা পান।

৭. এমন ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হবে যাতে বস্তিবাসীরা বাড়ির স্বপ্ন দেখতেই পারেন।

৮. ঢাকা নগরীর দরিদ্রদের আবাসনের জন্য ঋণ ও বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।

৯. ফ্ল্যাট কেনার জন্য স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করলে আবাসন-সংকট নিরসনে বড় অগ্রগতি হবে। বিষয়টিকে লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার পাশিপাশি তা অর্জনের জন্য কাজ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *