মিডিয়া কাভারেজবহুতল বিল্ডিং

December 30, 2019by farjul0

বিখ্যাত মরমি কবি জালালুদ্দিন রুমি লিখেছেন-
‘প্রেমের সবুজ বাগিচা অন্তহীন সীমানা তার
থরে থরে সাজানো কত ফলমূল অন্তরে যার
পাশাপাশি যদিও আছে মিলন আনন্দ বেদনার।’

কিন্তু নির্মম বাস্তবতা হলো- বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে নির্মল বিনোদন কিংবা বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার তেমন কোনো সুন্দর ব্যবস্থা নেই -এ কথা বলাই যায়।
ঢাকা মহানগরীর ৫৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রায় ১২ লাখ ৫০ হাজার ভবন রয়েছে। হ্যারিটেজ বা ঐতিহ্যবাহী ভবন আছে ২২৯টি। এছাড়া মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ৩২১টি। এর মধ্যে বিধিবিধান লঙ্ঘন করে নির্মিত ভবন আছে ৫ সহস্রাধিক। ফলে ঢাকা শহর এখন কংক্রিটের শহরে পরিণত হয়েছে। এখানে নিত্য যানজট, ধুলোবালি, কিছুদিন পর পর সড়ক কাটাকাটি, সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা ও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবসহ বিভিন্ন সমস্যা লেগেই থাকে। জীবন-জীবিকার তাগিদে এসব সমস্যা এখন কষ্ট করে হয়ত অনেকে মেনেও নিয়েছেন। তারপরও তো মাঝেমধ্যে কর্মব্যস্ত জীবনটা বিষিয়ে ওঠে। ইচ্ছে করে, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটু নির্মল পরিবেশে সময় কাটানোর। রাজধানীবাসীর এই যে মনের চাহিদা এটা মেটানোর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মাধ্যম হতে পারে সবুজ প্রকৃতি বা পার্ক। এসব পার্ক হবে নগরবাসীর সামাজিকীকরণ, বিনোদন, খেলাধুলা, মানসিক প্রশান্তি এবং শরীরচর্চার ক্ষেত্র। সুস্থ একটা নাগরিক সমাজ গঠনে এসব পার্ক রাখতে পারে অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু ঢাকা শহরে যে পরিস্থিতি তাতে চাইলেও সহজে তা করা যায় না। এর প্রধান কারণ- জায়গার অভাব। তবু রাজধানীবাসীর জন্য এক্ষেত্রে করণীয় রয়েছে। সেই করণীয়কে সামনে রেখে নেয়া হবে বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ। এজন্য সহজেই যা করা যায় তাহলো রাজধানীর পরিত্যক্ত স্থানকে পার্কে রূপান্তর করা। রাজধানীর এখনো যেসব এলাকা খালি আছে সেসব এলাকায় ছোট ছোট বা এক/দুই তলা ভবন না বানিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করা দরকার। তাতে জায়গার সাশ্রয় হবে। বহুতল ভবন নির্মাণে যেমন বেশি মানুষের মাথা গোজার ঠাঁই হবে তেমনি বাড়তি জায়গা নগরবাসীর জন্যই কাজে লাগানো যাবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- বর্তমানে যদি ১০ কাঠা জমিতে ৫০ জন মানুষ বসবাস করে, সেখানকার ৫ কাঠা জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করলে সেই ভবনে হয়ত ৫০ জন লোকের বসবাসের ব্যবস্থা করা সম্ভব। এভাবে রাজধানীতে বেরিয়ে আসবে বেশ কিছু খালি জায়গা। সেই খালি জায়গায় তৈরি করা যায় পার্ক, খেলার মাঠ যা রাজধানীবাসীর জন্য হয়ে উঠবে একটু স্বস্তিভরে নিঃশ্বাস নেয়ার জায়গা। এ কাজ করতে পারলে রাজধানী ঢাকা আবার বাসযোগ্য হয়ে উঠবে অনেকটাই।
রাজধানীর এ ধরনের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার কথা দুই সিটি করপোরেশন এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক-এর। কিন্তু কেউই দায়িত্ব নিয়ে এ ধরনের জনমুখী কর্মকাণ্ড করতে সেভাবে এগিয়ে আসছে না বরং তারা একে অপরকে দোষারোপ করছে। আমরা নির্বাচিত হলে এই সমস্যার সমাধান করা হবে দ্রুতই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *